উখিয়ায় চামড়ার টাকা বঞ্চিত হাজারো এতিম

বিশেষ প্রতিবেদক :

কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকার জন্য যেসব হতদরিদ্র, এতিম, গরিব-মিসকিন একমাস আগে থেকে বিত্তবানদের দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে বলত, ‘আমার জন্য চামড়ার টাকা রেখে দিও’। তারাই এবার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চামড়ার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সারাদেশের ন্যায় উখিয়াতেও চামড়া বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে। যে কারণে চামড়ার দাম পায়নি কুরবানদাতা, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে করে আগামীতে এ বিপর্যয় চামড়া শিল্পের উপর প্রভব পড়তে পারে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

উখিয়া-টেকনাফে প্রায় এগার লাখ রোহীঙ্গার বসবাস নিয়ে কুরবানির পশুর সংকটে একটি গুজব উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়নি। গরু ব্যবসায়ীর সাথে জড়িত একাধিক লোকজন জানান, এবার প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী কুরবানির পশুর হাঠ বসেনি। যেখানে মানুষ সেখানেই কুরবানির পশুর হাঠের বাজার পরিলক্ষিত হয়েছে। কুরবানির পশু ব্যবসায়ী সালামত উল্লাহ জানান, আল্লাহর অসীম রহমত এবার চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমান গরু-মহিষ, ছাগল বাজারে উঠেছে। দামও সহনীয় পর্যায়ে থাকার কারণে একতৃতীয়াংশের বেশি মানুষ কুরবানিতে শরীক হয়েছে। উপজেলা পশু কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন দেয়া তথ্য মতে, উখিয়ায় আঠার হাজার গরু কোরবানীর চাহিদা ছিল। কিন্ত মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে প্রায় ত্রিশ হাজারের অধিক পশু কোরবানি হয়েছে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে চামড়ার ন্যায্য মূল্য কেউ পায়নি।

চামড়ার মূল্যের এমন বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উখিয়ার পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী মুসলেম উদ্দিন জানান, সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানী করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ট্যানারি মালিক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। যে কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে লোকসানের ভয়ে চামড়া ক্রয় করেনি। যদিও কিছু কিছু চামড়া বিক্রি হয় তাও নামমাত্র মূল্যে। ফলে কুরবানি দাতারা যেভাবে চামড়া ন্যায্য মূল্য পায়নি সেভাবে বঞ্চিত হয়েছে এলাকার হতদারিদ্র, গরিব- মিসকিন ও বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কাজীপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কাজী রফিক উদ্দিন, জসিম উদ্দিন জানান, তারা ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকায় একটি কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে দাম পেয়েছে ১৫০ টাকা। তারা জানান, অনেক কুরবানির পশু চামড়ার দামও অনেকেই পায়নি। ফলে ঈদ-উল-আযহার পবিত্র এই দিনে চামড়া বিক্রি বাবদ খয়রাতির অনেক গরীব-মিসকিন হতাশ হয়ে পড়তে দেখা গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান জানান, উখিয়ার ২০টি রোহীঙ্গা ক্যাম্পে আড়াই হাজারের অধিক গরু সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১১৮টি গবাদি পশু।